নিজস্ব প্রতিবেদক: সিলেটের অন্যতম পর্যটন স্পট ভোলাগঞ্জের সাদা পাথর এলাকা এখন কার্যত বিরাণভূমি। কোথাও আর আগের মতো ঝকঝকে পাথরের স্তূপ নেই। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ওই এলাকার সাম্প্রতিক ছবি ভাইরাল হওয়ার পর দেশজুড়ে সমালোচনার ঝড় উঠলেও, মঙ্গলবার (১২ আগস্ট) রাতে সিলেট-কোম্পানীগঞ্জ সড়ক দিয়ে শত শত পাথরবোঝাই ট্রাক নিরবচ্ছিন্নভাবে সরিয়ে নেওয়ার দৃশ্য ধরা পড়েছে সাংবাদিকদের ক্যামেরায়।
সাংবাদিকদের অনুসন্ধানী টিম সকাল থেকে রাত পর্যন্ত সাদা পাথর এলাকায় অবস্থান করে দেখেছে—ধোপাখোলা বাজার থেকে কোম্পানীগঞ্জ পর্যন্ত প্রায় ১৫ কিলোমিটার এলাকায় সারি সারি ক্রাশার মেশিন বসানো। এখানেই ভোলাগঞ্জ থেকে আনা পাথর গুঁড়া করা হচ্ছে। শুধু তাই নয়, স্থানীয় স্থলবন্দর দিয়ে ভারতের মেঘালয় থেকে আমদানিকৃত পাথরের সঙ্গে এই লুটকৃত সাদা পাথর মিশিয়ে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে পাঠানো হচ্ছে।
প্রশাসনের জিরো টলারেন্স, তবু লুট বন্ধ নয়
কোম্পানীগঞ্জ থানার ওসি উজায়ের আল মাহমুদ আদনান বলেন, সাদা পাথর লুটের ঘটনায় এখন পর্যন্ত ১৭টি মামলা হয়েছে, ১৯১ জন আসামির নাম উল্লেখ করা হয়েছে এবং অজ্ঞাতনামা রয়েছে আরও ৩১০ জন। গ্রেপ্তার হয়েছে ৭০ জন। শতাধিক ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হয়েছে। তার দাবি—“আমরা জিরো টলারেন্সে আছি, একটি পাথরও যেন লুট না হয় সেটাই লক্ষ্য। মূলহোতা কয়েকজনকে আইনের আওতায় আনা হয়েছে।”
উদাসীনতার অভিযোগ
বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা) সিলেটের সমন্বয়ক অ্যাডভোকেট শাহ সাহেদা আখতার প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “প্রশাসনকে ব্যর্থ বলব না, ব্যর্থতা তখনই হতো যদি তারা চেষ্টা করত। আসলে তারা কখনোই সাদা পাথর রক্ষায় চেষ্টা করেনি। এক বছর আগেও এই এলাকায় হাত দেওয়ার সাহস কেউ পায়নি, এখন সেই নিরাপত্তা নেই।”
অভিযান চলছে, কিন্তু ফল নেই
সিলেটের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শের মাহবুব মুরাদ জানান, “নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে, কিন্তু কোনোভাবেই পাথর লুট বন্ধ হচ্ছে না।” আগে এটি রক্ষা করতে পারলেও এখন কেন পারছেন না—প্রশ্ন করা হলে তিনি একই উত্তর দেন, “আমরা নিয়মিত অভিযান চালাচ্ছি।”
পাথর পাচারে ‘সবার মিলিত দুর্বৃত্তপনা’
সিলেটের পরিবেশ আন্দোলনের অন্যতম সংগঠক আব্দুল করিম কিমের দাবি, আমদানিকৃত পাথরের নিচে ও উপরে লুটকৃত সাদা পাথর মিশিয়ে পাচার করা হচ্ছে। তিনি বলেন, “ট্রাক ভর্তি হয়ে পাথর যাচ্ছে—এই তথ্য পাচ্ছি, কিন্তু অবাক করা বিষয় হলো লুটের সময় পুলিশ বা বিজিবির কোনো তৎপরতা দেখা যায়নি। এখনো আমদানি পাথরের সঙ্গে মিশিয়ে পাচারের ক্ষেত্রে আটকানোর চেষ্টা নেই।”
তিনি আরও জানান, পূর্বেও জব্দকৃত পাথর নিলামে বিক্রি হয়েছে সেই একই দুর্বৃত্তদের কাছে যারা লুট করেছে। “এই অপকর্ম বন্ধ করতে কঠিন ব্যবস্থা নিতে হবে এবং জব্দের সময় নাগরিক প্রতিনিধিদের সঙ্গে রাখতে হবে, যাতে প্রকৃতচিত্র উঠে আসে,” যোগ করেন তিনি।
সমালোচনার ঝড়ের মধ্যেও অপরাধীদের লাগামহীন কার্যক্রম
স্থানীয়দের অভিযোগ, সমালোচনা, গণমাধ্যমের প্রতিবেদন এবং প্রশাসনের অভিযানের মধ্যেও মূল লুটপাট চক্র অপ্রতিরোধ্যভাবে সক্রিয় রয়েছে। সাদা পাথরের সৌন্দর্য ও প্রাকৃতিক সম্পদ রক্ষায় সরকারের ব্যর্থতা এখন জনমনে গভীর হতাশা ও ক্ষোভের জন্ম দিয়েছে।
https://slotbet.online/