নিজস্ব প্রতিবেদক :
বাবুগঞ্জের এলজিইডি অফিস যেন আচমকা এক ব্যক্তির ব্যক্তিগত সম্পত্তিতে পরিণত হয়েছে—অভিযোগ এমনটাই স্থানীয়দের। এলসিএস প্রকল্পের অর্গানাইজার সানজিদা আক্তার বছরের পর বছর ধরে ঘুষ বাণিজ্য, ক্ষমতার অপব্যবহার, স্বজনপ্রীতি আর দুর্নীতির এমন এক সাম্রাজ্য গড়ে তুলেছেন, যার সামনে অসহায় হয়ে পড়েছেন প্রকৃত দরিদ্র নারীরা। সরকারি প্রকল্পের নামে যেন চলছে ব্যক্তিগত ব্যবসা—যেখানে নিয়োগ পেতে হলে দরকার মোটা অংকের টাকা আর ক্ষমতাসীনদের দালালি।
ঘুষ ছাড়া চাকরি নয়—এটাই সানজিদার নিয়ম
অসহায় দরিদ্র নারীরা দিনের পর দিন এলজিইডি অফিসের বারান্দায় ঘুরে ঘুরে কাজের আশায় অপেক্ষা করেছেন। কিন্তু সানজিদার দরজায় পৌঁছাতেই নাকি প্রথম প্রশ্ন—
৪০-৫০ হাজার টাকা দিবা? টাকা আনো, তারপর দেখা যাবে।”
টাকা না থাকলে নিয়োগের কথা ভাবতেও নিষেধ। সরকারি চাকরির বিধি-বিধানকে প্রকাশ্যে পদদলিত করে এমন দুঃসাহসিক ঘুষ বাণিজ্য বছরের পর বছর ধরে চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি—এমনই অভিযোগ স্থানীয়দের।
স্বজনপ্রীতির চরম দৃষ্টান্ত: ভাইকে সুপারভাইজার বানিয়ে পুরো প্রকল্প দখল
এলসিএস প্রকল্পের সুপারভাইজার পদের মতো গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে নিজের আপন ভাই কাওছারকে বসিয়ে সানজিদা পুরো প্রকল্পটিকে পরিবার-চালিত সিন্দুকে রূপ দিয়েছেন। অভিযোগ রয়েছে—এই দুজন মিলে শ্রমিক নিয়োগ, হাজিরা, হিসাব—সব কিছুই নিজেদের মতো করে সাজিয়ে নিয়ে কোটি টাকার খেলায় মেতে উঠেছেন।
এমনকি রেকসোনা নামে এক শ্রমিককে নিয়োগ দেখিয়ে হাজিরায় তার ছেলে মিরাজের নাম দিয়ে সরকারি টাকা হাতিয়ে নেওয়া হয়েছে—যা সরাসরি প্রতারণা ও রাষ্ট্রীয় অর্থ আত্মসাতের শামিল।
ব্যক্তিগত কাজও করান প্রকল্পের শ্রমিক দিয়ে
নিয়োগপ্রাপ্ত তহমিনা ও তার মেয়ে নুরনাহারকে দীর্ঘ ৭–৮ বছর ধরে বেআইনিভাবে ধরে রেখেছিলেন সানজিদা। অভিযোগ উঠেছে—এই দুজনকে প্রকল্পের শ্রমিক বানিয়ে নিজের ব্যক্তিগত বাসায় গৃহকর্মী হিসেবে কাজ করিয়েছেন তিনি।
প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য—দুস্থ নারীদের কর্মসংস্থান—তার কাছে যেন ব্যক্তিগত লাভ তুলার যন্ত্র ছাড়া কিছুই নয়।
ক্ষমতাসীনদের ছত্রছায়ায় ‘অঘোষিত সম্রাজ্য’
স্থানীয়রা অভিযোগ করেছেন, বাবুগঞ্জ উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতার সঙ্গে সখ্যতা গড়ে তুলে সানজিদা এলজিইডি অফিসে এমন প্রভাব বিস্তার করেন যে,
“তার ইশারা ছাড়া অফিসে একটি কাগজও নড়ত না।”
এই প্রভাবকে পুঁজি করে ইউপি সদস্যদের মাধ্যমে পাওয়া বিভিন্ন প্রকল্পও এলসিএস শ্রমিক দিয়ে করিয়ে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ রয়েছে।
অভিযোগ শুনে অস্বীকার, চাপের মুখে ‘মাথা ব্যথা’
অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে সানজিদা কখনও বলেন, কেউ কাজের পর অন্য কাজ করলে সমস্যা কোথায়? আবার কখনও বলেন, অফিসে আসেন, তখন বলব… মাথা ব্যথা করছে।
ভাই কাওছারকে ‘আত্মীয় না’ বলে দাবি করলেও স্থানীয়রা বলছেন—এটি সরাসরি মিথ্যাচার।
উপজেলা প্রকৌশলীর অজানা থাকার নাটক
উপজেলা সহকারী প্রকৌশলী এমদাদুল হক আলিম বলেন,আমি এসব জানি না।
এ কথা স্থানীয়দের আরও ক্ষুব্ধ করেছে। তাদের প্রশ্ন—
“এত বড় দুর্নীতি চলছে, আর প্রকৌশলী জানেন না—এটা কি বিশ্বাসযোগ্য?
স্থানীয়দের দাবি—তাৎক্ষণিক তদন্ত, কঠোর ব্যবস্থা
এলাকার সাধারণ মানুষ বলছেন, এলসিএস প্রকল্প সানজিদা আক্তারের দুর্নীতির লুটপাটের স্বর্গরাজ্যে পরিণত হয়েছে। দরিদ্র নারীদের জীবনধারণের সুযোগকে তিনি ব্যক্তিগত আয়ের উৎস বানিয়েছেন।
তারা দ্রুত তদন্ত কমিটি গঠন, সব নিয়োগ তালিকা যাচাই এবং সানজিদার অপকর্মের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার জোর দাবি জানিয়েছেন।
https://slotbet.online/