নিজস্ব প্রতিবেদক:
ঢাকার জাতীয় একটি দৈনিকের সাংবাদিকের বাসায় অনুমতি ছাড়া প্রবেশ, ডিবি পুলিশ পরিচয় প্রদান, ভয়-ভীতি প্রদর্শন, রাজনৈতিক চাপ প্রয়োগ এবং প্রাণনাশের হুমকির অভিযোগ উঠেছে পল্লী সঞ্চয় ব্যাংকের মাঠ সহকারী মনিরুজ্জামান পরাগের বিরুদ্ধে। অভিযোগটি গত ১৩ জুন ২০২৪ তারিখে বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের বিমানবন্দর থানায় দাখিল করা হলেও অভিযোগকারীর দাবি, বহু সময় পেরিয়ে গেলেও তদন্ত শুরু হয়নি। তিনি অভিযোগ করছেন, তৎকালীন সরকারি দলের প্রভাবশালী মহলের চাপে বিষয়টি “নিচে চাপা দিয়ে রাখা হয়েছে”।
অভিযোগে বলা হয়, ১০ মে ২০২৪ তারিখ দুপুর আনুমানিক ১টার দিকে মোটরসাইকেল (বরিশাল-মেট্রো-হ-১৩-৭৩১৮) নিয়ে সাংবাদিকের কাশিপুর পোস্ট অফিস বাজারের শিববাড়ি মোড় এলাকার ভাড়াটিয়া বাসায় উপস্থিত হন মনিরুজ্জামান পরাগ। দরজা খোলামাত্রই তিনি নিজেকে ডিবি পুলিশ পরিচয় দিয়ে ভেতরে ঢুকে পড়েন। কিছুক্ষণ পর নিজের পরিচয় পরিবর্তন করে জানান যে তিনি পল্লী সঞ্চয় ব্যাংকের মাঠ সহকারী এবং ঢাকার প্রভাবশালী রাজনৈতিক ঘনিষ্ঠ ও সিবিএ সিন্ডিকেটের নির্দেশে এসেছেন।
সাংবাদিক জানান, পরাগ বাসায় ঢুকেই জাতীয় পত্রিকায় প্রকাশিত দুর্নীতিবিষয়ক সংবাদ সম্পর্কে নানা প্রশ্ন করতে থাকেন এবং এসব সংবাদ প্রকাশ বন্ধ রাখতে চাপ প্রয়োগ করেন। তিনি হুমকি দিয়ে বলেন, “কথা না শুনলে বড় ধরনের ক্ষতির সম্মুখীন হতে হবে।” অভিযোগে আরও উল্লেখ করা হয়, ঢাকার সিবিএ নেতা ও সাবেক ছাত্রলীগ নেতা রোবেল, সিবিএ সভাপতি ও আওয়ামী লীগপন্থী নেতা এনামুল এবং তাদের ঘনিষ্ঠ মাঠ সহকারী নাজমুলের নির্দেশেই পরাগ বরিশালে এসেছিলেন। সাংবাদিকের রাজনৈতিক মতাদর্শ, অনুসন্ধানের উদ্দেশ্য এবং আইনি পদক্ষেপের পরিকল্পনা সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করাও তার দায়িত্ব ছিল বলে অভিযোগে বলা হয়েছে।
এ সময় পরিস্থিতি সন্দেহজনক মনে হলে সাংবাদিক পরাগের প্রকৃত পরিচয় জানতে চান। পরাগ তার সহযোগী নাজমুলকে ফোন করে পরিচয় নিশ্চিত করার চেষ্টা করেন। পরে সাংবাদিক নিজেই পল্লী সঞ্চয় ব্যাংক বরিশাল জেলা কার্যালয়ের প্রধান কর্মকর্তা হামিদা বেগমকে ফোন করলে তিনি মনিরুজ্জামান পরাগের পরিচয় নিশ্চিত করেন, তবে কেন তিনি অনুমতি ছাড়া সাংবাদিকের বাসায় প্রবেশ করেছেন তার কারণ তিনি ব্যাখ্যা করতে পারেননি। এ বিষয়ে করা ফোনকলের রেকর্ড অভিযোগের সঙ্গে সংযুক্ত রয়েছে।
অভিযোগে আরও বলা হয়, মনিরুজ্জামান পরাগ স্বীকার করেছেন যে সাংবাদিকের দাখিল করা ৮ মে’র তথ্য-চেয়ে অনুরোধপত্র তারা রাজধানী কার্যালয়ের সিস্টেম অ্যানালিস্ট মোহাম্মদ ইয়াহিয়া তানহারের মাধ্যমে পেয়েছেন। সেই তথ্য কাজে লাগিয়েই সাংবাদিককে ভয় দেখানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। পরাগ আরও জানান, রোবেল-এনামুল সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে সংবাদ প্রকাশ বা আইনি উদ্যোগ নিলে সাংবাদিককে লাঞ্ছিত করা, শারীরিকভাবে আক্রমণ করা, এমনকি র্যাবের মাধ্যমে গুম করে ফেলা পর্যন্ত হতে পারে। কয়েক দিন পরে মাঠ সহকারী নাজমুলও সাংবাদিকের সঙ্গে সরাসরি সাক্ষাৎ করে একই ধরনের হুমকি প্রদান করেন।
এ ঘটনায় সাংবাদিক ও তার পরিবার চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন তখন বলে অভিযোগে উল্লেখ রয়েছে। তিনি বলেন, “অভিযোগ দেওয়ার পর এক মাসেরও বেশি পেরিয়ে গেছে, কিন্তু পুলিশ এখনও কোনো তদন্ত শুরু করেনি। বরিশালের কোনো কর্মকর্তা আমাকে জিজ্ঞাসাবাদ করেননি। প্রভাবশালী রাজনৈতিক মহলের চাপে বিষয়টি ইচ্ছাকৃতভাবে উপেক্ষা করা হচ্ছে।” এই পরিস্থিতিতে তিনি নিজের ও পরিবারের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, ঘটনাটির পূর্ণ তদন্ত শুরু করা এবং সংশ্লিষ্টদের আইনের আওতায় আনার দাবি জানিয়েছেন।
এ বিষয়ে মন্তব্য জানতে বিমানবন্দর থানায় পুনরায় এফআইআর এর আবেদন করছেন বলে জানা গেছে।
https://slotbet.online/